দেড় কেজি ইলিশ ৬ হাজার টাকা! by মফিজুল সাদিক

প্রতিটি বাঙালির ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। মাত্র দুই দিন, বর্ষবরণের ক্ষণ গণনা চলছে। চলছে বর্ষবরণের নানারকম প্রস্তুতিও। আবহমানকাল ধরে উদযাপিত হয়ে আসা পহেলা বৈশাখ উ‍ৎসবে পান্তা-ইলিশ যেন অবিচ্ছেদ্য উপকরণ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, পান্তা-ইলিশ ছাড়া যেন বৈশাখী উৎসবই বৃথা।

ক্রেতার এই চাহিদাকে পুঁজি করে প্রতিবারের মতো এবারও হুট করে বেড়ে গেছে ইলিশের দাম। পহেলা বৈশাখের পাঁচ দিন আগেই ইলিশের পালে লেগে গেছে বৈশাখের উত্তাপ। বিক্রেতারা বলছেন, শনিবার ও রোববার ইলিশের দাম আরও বাড়বে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ীর কয়েকটি মাছের আড়তে দেড় কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ ৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের নিচ তলায় ‘আল্লাহর দান ফিস বিক্রয় কেন্দ্রে’ দেড় কেজি ওজনের একটি ইলিশ ছয় হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন দোকান মালিখ। এ ধরনের প্রতি হালি ইলিশ সেখানে ২৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

আল্লাহর দান ফিস বিক্রয় কেন্দ্রের মালিক শুক্কুর আলী বাংলানিউজকে জানান, এক সপ্তাহ আগ থেকেই বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশের দাম বেড়ে গেছে। দেড় কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন ইলিশের মৌসুম নয়, কিন্তু চাহিদা বেশি থাকায় ইলিশের দাম বাড়তি।

শুক্কর আলী দাবি করেন, বড় ইলিশগুলো চাঁদপুর থেকে ঢাকায় এসেছে। বৈশাখী উৎসবে ছোট ইলিশও যেন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশও ১২শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাদের। নগরীর বাংলামটর থেকে কারওয়ান বাজারে ইলিশ কিনতে এসে যেন বিপাকে পড়েছেন। এ সময় তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বড় ইলিশের যে দাম, এবার মনে হয় পুঁটি মাছ দিয়ে পান্তা খেতে হবে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়তগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা ইলিশ বরিশাল, পাথরঘাটা, ভোলা এবং ফ্রিজিং ইলিশ চট্রগ্রাম ও খুলনা হয়ে নগরীতে প্রবেশ করছে। পাইকারি আড়তে দেখা গেছে, কাঁচা ইলিশের দামের তুলনায় ফ্রিজিং ইলিশের দাম অনেক কম।

তবে খুচরা বিক্রেতারা কাঁচা ইলিশের কথা বলে ফ্রিজিং ইলিশ বিক্রি করছেন। ফ্রিজিং ইলিশ মায়ানমার ও ভারত থেকে নগরীতে আসছে। আড়তগুলোতে কাঁচা ইলিশের আমদানি কম।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি কারওয়ান বাজারের মাছের আড়তে দেড় কেজি আকারের প্রতিকেজি কাঁচা ইলিশ ২৭শ’ থেকে ২৮শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একই আকারের ফ্রিজিং ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকা কেজি দরে।

এখানে ১ কেজি থেকে ১২শ’ গ্রাম সাইজের প্রতিকেজি কাঁচা ইলিশ দুই হাজার এবং একই আকারের ফ্রিজিং ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা দরে।

৮শ’ গ্রাম থেকে ১ কেজি আকারের প্রতি কেজি কাঁচা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকা দরে এবং ফ্রিজিং ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা দরে।

৬শ’ গ্রাম থেকে ৮ম” গ্রাম আকারের প্রতিকেজি কাঁচা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা দরে এবং ফ্রিজিং ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা দরে।

মাছের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে পাইকারি বিক্রেতা কারওয়ান বাজার মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের মৎস আড়তের মালিক ও ফিস মার্চেন্ট অ্যান্ড কমিশনের এজেন্ট মো. ওসমান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সারা বছরই কম বেশি ইলিশের ব্যবসা করে থাকি। তবে বৈশাখের ৫ থেকে ৭ দিন ইলিশের চাহিদা অনেক থাকে। যার ফলে ইলিশের দাম বাড়তি হয় এসময়।

তিনি জানান, চট্টগ্রাম ও খুলনা থেকে ফ্রিজিং মাছই বেশি আমদানি করা হচ্ছে। এছাড়া, কাঁচা ইলিশ বরিশাল থেকে আমদানি করা হচ্ছে।

নগরীর যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তগুলোর মধ্যে রাজলক্ষী, দাদা ও ঢাকা মাছের আড়তে বরিশাল অঞ্চলের ইলিশ বেশি আমদানি হচ্ছে। তবে যাত্রাবাড়ী খান মৎস আড়তে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার অঞ্চলের মাছ বেশি আমদানি হচ্ছে।

শুক্রবার খান আড়তে দেড় কেজি ওজনের একটি কাঁচা ইলিশ ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে, বিক্রেতারা বলছেন, শনিবার ও রোববারে ইলিশের দাম আরও বাড়বে।

মা মনি মৎস আড়তের মালিক বাবুল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমার আড়তে একটি ইলিশ ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। বড় লোকদের হিসাব-কিতাব আলাদা।

এক কেজির ওজনের ওপরে হলেই ইলিশের দাম কয়েকগুণ বেশি। যাত্রাবাড়ীর মেসার্স মেঘনা এন্টারপ্রাইজের মালিক সহিদুল ইসলাম স্বপনও দেড় কেজি সাইজের একটি ইলিশ ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। আবার এককেজি সাইজের একহালি ইলিশ তিনি বিক্রি করেছেন ৬ হাজার টাকায়।

স্বপন বাংলানিউজকে জানান, কাঁচা ইলিশের আকার বড় ও সাদা চিকচিক করলে তার ক্রেতারা কিনে নেয়। বড় ইলিশ বিক্রি হয় মূলত ক্রেতার নজর কাড়ার ওপর ভিত্তি করে।

ঢাকা মহানগরের মধ্যে প্রায় ১০টি পাইকারি মৎস্য আড়ত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে যাত্রাবাড়ী, সোয়ারীঘাট, কাওরানবাজার, নিউ মার্কেট, শাহ আলী, আব্দুল্লাহপুর, মুগদা, মেরুল বাড্ডা। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সবগুলো বাজারেই যেন ইলিশের দামের পালে বৈশাখী উত্তাপ লক্ষ্য করা গেছে।

যাত্রাবাড়ী মেসার্স রিপা এন্টারপ্রাইজের মালিক ও ফিস মার্চেন্ট কমিশন এজেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বৈশাখের আগ মুহূর্তে ইলিশের দাম বৃদ্ধি বৈশাখী উৎসবের মতোই একটা চিরাচরিত প্রথায় পরিণত হয়েছে। এটা কমানোর ক্ষমতা আমাদের হাতে নেই। তবে বৈশাখের পরে এমনিতেই ইলিশের দাম কমে আসবে।

তিনি জানান, যে পরিমাণ ইলিশ বাজারজাত হয়, তার থেকে কয়েকগুণ চাহিদা বেশি।

ক্রেতারা অনেক সময় কাঁচা ও ফ্রিজিং ইলিশ সনাক্ত করতে পারেন না। তবে, সচেতনভাবে একটু লক্ষ্য করলেই কাঁচা ও ফ্রিজিং ইলিশ চেনা যাবে। কাঁচা ইলিশ হাতে ওঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই বাঁকা হয়ে যাবে এবং সহজেই ইলিশের কান দেখা যাবে, অনেক সময় এসব ইলিশের কান দিয়ে রক্তও ঝরতে থাকবে।

অপরদিকে ফ্রিজিং ইলিশ হাতে ওঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই বাঁকা হবে না এবং শক্ত হয়ে থাকবে। এ ধরনের ইলিশের কান দেখার চেষ্টা করলে কান ভেঙ্গে যাবে এবং কানের মধ্যে কালচে রং দেখা যাবে।

অধিকাংশ ফ্রিজিং ইলিশ মায়ানমার থেকে আমদানি করা হচ্ছে বলে বাজার সূত্রে জানা গেছে।
Share on Google Plus

About Unknown

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment