শেষ তুলির আঁচড় by রহমত উল্যাহ

দিন পেরুলেই নতুন বছর। চারদিকে সাজ সাজ রব, ব্যস্ত বর্ষবরণের কারিগররা। শেষ সময়ে মনের মাধুরি মিশিয়ে ‍আলপনায় তুলির আঁচড় দিচ্ছেন তারা। রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে গিয়ে দেখা যায়, একঝাঁক শিক্ষার্থী রাত জেগে বর্ষবরণের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সারছে।

ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা মাটি, বাঁশ, কাঠ ও খড়ের তৈরি মাছের ঝাঁক, লক্ষ্মী পেঁচা, হরিণ শাবক, হাঁস আর ময়ূরগুলোকে বর্ণিল রঙে সাজিয়ে তুলছেন। কেউবা ব্যস্ত আলপনার কাজে।

হরিণ শাবকটিকে সাজিয়ে তোলার কাজে ব্যস্ত চারুকলা শিক্ষার্থী তন্ময় বাংলানিউজকে বলেন, পুরাতন বছরের সকল গ্লানি মুছে নতুনকে বরণ করতে হবে, তাই এই ব্যস্ততা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পহেলা বৈশাখে সবাই এক ছাতার নিচে দাঁড়াবো।

তিনি আরও বলেন, হরিণ শাবক নিষ্পাপ বলে সবার সাথে মিশতে পারে। নতুন দিনে সব ভেদাভেদ ভুলে মানুষ মিলিত হবে বলে এ প্রতীক ব্যবহার করা হয়।

তন্ময় জানান, শোভাযাত্রার আয়োজনে আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, বিভিন্ন লোকজ মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেমন; সমৃদ্ধির প্রতীক (হাঁস, মাছের ঝাঁক, মা ও শিশু, লক্ষ্মী পেঁচা), লোক ঐহিত্যের প্রতীক (বিড়ালের মুখে চিংড়ি, বাঘের মুখোশ, শখের হাঁড়ি), দুঃসময়ের কান্ডারি (গাজী ও গাজীর বাঘ), পবিত্রতার প্রতীক (হরিণ শাবক), সৌন্দর্যের প্রতীক (ময়ূর) বানানো হচ্ছে।

বাঁশের তৈরি কাঠামোর ওপর শেষ সময়ে দেওয়া হচ্ছে কাগজের পলেপ। এসব প্রতীক বাংলার ঐহিত্য। পহেলা বৈশাখে এসব প্রতীক মানুষের মাঝে উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তন্ময়।

বাঁশ ও আর তার দিয়ে পেঁচা তৈরির কাজে ব্যস্ত ঈশ্বর চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে জানান, নতুন বছরের নতুন দিন সকল অশুভ শক্তিকে রুখবে পেঁচা। সারাবছর মানুষ যেন সকল কালিমা মুছে সুখে থাকতে পারে সেই প্রত্যাশায় এই প্রতীক ব্যবহার।

চারুকলার বেশ কয়েকটি রুমে বিভিন্ন প্রাণীর মুখোশ আর ফেস্টুন তৈরিতে ব্যস্ত একদল শিক্ষার্থী। এসব মুখে পরে নেচে গেয়ে শুরু হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। মুখোশে দেওয়া হচ্ছে শেষ সময়ের তুলির আচড়।

মুখোশে তুলির আচড় দেওয়া শিক্ষার্থী সৈকত বাংলানিউজকে জানান, রং তুলির আচড় যত বেশি গাঢ় হবে অমঙ্গল আর অশুভ শক্তি তত দূরে চলে যাবে।

তাই মনের মাধুরী মিশিয়ে শিক্ষার্থীরা রং তুলির আঁচড় দিচ্ছেন। নতুন বছর সবার সুখ বয়ে আনবে প্রত্যাশায় অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তারা।

চারুকলার সামনের দেওয়ালে গ্রাম বাংলার বিভিন্ন ঐহিত্যের আলপনার চিত্রায়নে ব্যস্ত একদল নবীন শিক্ষার্থী।

নব বিবাহিত বাংলার বধূ পায়রা উড়াচ্ছেন দেয়ালে এমন চিত্রায়নে ব্যস্ত শিক্ষার্থী পরিমল জয়ধর বাংলানিউজকে জানান, নববর্ষ নববধূর জীবনে সুখ বয়ে আনবে এ মনে নববধূ শান্তির দূত পায়রা উড়াচ্ছেন।

চিত্রায়ন শেষ হলেও শেষ তুলির আঁচড় দেওয়া বাকি। এসব দেয়াল চিত্রায়ন মানুষের মনে প্রভাব ফেলবে।

চিত্রায়নে ব্যস্ত কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সারাবছর না হলেও অন্তত বছরের একটি দিন এসব চিত্রায়ন বাংলার ঐহিত্যের কথা মনে করিয়ে দেবে শহুরে নাগরিকদের।

পহেলা বৈশাখের মূল আর্কষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হবে সকাল ৯টায়। এটি ২৬তম মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারের শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য ‘জাগ্রত করো, উদ্যত করো, নির্ভয় করো হে’।
Share on Google Plus

About Unknown

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment